পর্যটকদের স্বাগত জানাতে তৈরী 'বাঁকুড়ার রাণী' মুকুটমনিপুর
বাঁকুড়াঃ প্রাত্যহিক কর্মব্যস্ততা আর ইঁট কাঠ পাথরের জঙ্গলের মধ্য থেকে বেরিয়ে একটু আনন্দ উপভোগের জন্য মূলত ছুটির দিন গুলোকেই বেছে নেন অনেকেই। তাই ক্যালেণ্ডারে লাল দাগ দেওয়া ওই বিশেষ দিন গুলোতে একটা বড় অংশের 'পরিযায়ী' পর্যটকের অন্যতম পছন্দের 'ডেস্টিনেশান' হয়ে ওঠে জল, জঙ্গল আর পাহাড়ি সৌন্দর্যে ঘেরা 'বাঁকুড়ার রাণী' মুকুটমনিপুর। বাঁকুড়া শহর থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার দূরে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত মুকুটমনিপুরে সড়ক পথে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়।
মুকুটমনিপুর বেড়াতে এসে জলাধারে নৌকাভ্রমণ না করে ফিরে যাবেন- এমন বেরসিক মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া দূস্কর। আর তাই শীতের শুরুতেই পর্যটন মরশুম শুরুর আগেই যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে মুকুটমনিপুর উন্নয়ন পর্ষদ নৌকা বিহার পরিষেবা সমবায় সমিতি, সঙ্গে তৈরী নৌচালকরাও।
সমিতি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে মুকুটমনিপুরে ৬০ টি নৌকো সবসময়ের জন্য প্রস্তুত পর্যটকদের নিয়ে কাঁসাই আর কুমারীর সঙ্গমস্থলের বিশালাকার জলাধারের বুকে ভ্রমণের জন্য। এছাড়াও চলতি বছরে হুগলির বলাগড় থেকে আসা দক্ষ কারিগরেরা নতুন করে চারটি নৌকা তৈরীর পাশাপাশি পূরানো নৌকা গুলি মেরামতির কাজ শুরু করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে জলাধারে নৌভ্রমণের মূল্যও নির্দ্ধারিত রয়েছে। সূত্রের খবর, জলাধারে নৌভ্রমণের ক্ষেত্রে মাথা পিছু ১৫০ টাকা, ১ থেকে ৫ জনে মিলে রিজার্ভ করলে ১৫০০ টাকা, এক ঘন্টা বোটিং ১২০০ টাকা, আশেপাশে ঘুরলে জন প্রতি ৫০ টাকা, ওই একই নিয়মে রিজার্ভ করলে ৭০০ টাকা মূল্য ধার্য হয়েছে বলে জানা গেছে।
নতুন নৌকা তৈরী ও মেরামতির ফাঁকে মানিক বারিক বলেন, একটি নতুন নৌকা তৈরীতে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ পড়ে। এবার কয়েকটি নতুন নৌকা তৈরীর পাশাপাশি পূরাণো নৌকা গুলিও মেরামতির কাজ তারা করছেন বলে তিনি জানান।
আসন্ন পর্যটন মরশুমের কথা ভেবে খুশী নৌচালকরাও। নৌচালক বাবলু সাহু বলেন, আমরা প্রস্তুত, প্রস্তুত প্রশাসনও। পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ ও নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান
'বাঁকুড়ার রাণী' মুকুটমনিপুরে এসে খুশী পর্যটকরাও। মুশাফিরানা, ডিয়ার পার্ক থেকে পরেশনাথ শিব মন্দির, বারোঘুটু পাহাড়, সোনার বাংলা আর কংসাবতী-কুমারীর সঙ্গমস্থল ঘুরে সোনাঝুরি ইকো পার্কে খানিক বিশ্রাম করে নিচ্ছেন অনেকে। নদীয়া থেকে সপরিবারে মুকুটমনিপুর বেড়াতে আসা প্রাণতোষ দত্ত, প্রতিচী দত্তরা বলেন, অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা, গরম একটু লাগলেও বেশ ভালো লেগেছে। মোটামুটি প্রায় সবজায়গায় ঘুরে দেখার চেষ্টা করেছেন বলে তারা জানান।
প্রাত্যহিক কর্মব্যস্ততার মাঝে একটু আনন্দ উপভোগের জন্য মানুষ ছুটে আসছেন মুকুটমনিপুরেই। আর সেই সব আগত অতিথিদের যাতে কোন সমস্যায় না পড়তে হয়, তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। এবারও সেকারণেই সব জায়গাতেই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন আগত পর্যটকদের অপেক্ষায় 'বাঁকুড়ার রাণী' মুকুটমনিপুর।
Nov 26 2023, 18:01