বড়দিনের "সান্তাক্লজ" হিসেবে রক্তদানে এগিয়ে এলেন জামালদহের প্রতাপ
এসবি নিউজ ব্যুরো: জলপাইগুড়ির মেখলিগঞ্জের উছলপুকুরি গ্রাম পঞ্চায়েতর ধুলিয়া বলদিয়াহাটি এলাকার বাসিন্দা তাপসী অধিকারীর জীবনে আবারো নেমে এসেছিল ঘোর অমাবস্যা। বছর দুই আগে তার একদিনের কন্যা সন্তান মারা যায়। সেই ঘটনার পর দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে ধারণ করে তাপসী দেবী ও তার পরিবার পড়েন মহাফাঁপড়ে।
তার ডাক্তারবাবু তাপসী দেবীর সন্তান প্রসবের তারিখ দেন ডিসেম্বরের ২৪ । কিন্তু তার আগেই তাপসী দেবীর শারীরিক সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। কমে যায় রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ। ডাক্তার পরামর্শ দেন এক ইউনিট রক্ত রোগীকে দিতে হবেই। নাহলে সমস্যায় পড়তে হবে প্রসূতি মা ও আগত বাচ্চা।
এদিকে তাপসী দেবির রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ। এই গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে কালঘাম ছুটে যায় তাপসী দেবীর স্বামী ও তার পরিবারের বাকি সদস্যদের। সন্তান প্রসবের তারিখ যতই এগিয়ে আসতে শুরু করে, ততই দুশ্চিন্তায় পড়েন তাপসী দেবীর পরিবার। অনেক জায়গায় খোঁজ করেও রক্ত জোগাড় করে উঠতে পারে না তারা।
নিরুপায় হয়ে চারদিন আগে মেখলিগঞ্জ মহকুমা প্রেস ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাপসী দেবীর পরিবার। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে রক্ত চাই বলে সামাজিক মাধ্যমে একটি লেখা পোস্ট করা হয়।
সেটা দেখে এগিয়ে আসেন জামালদহের বাসিন্দা প্রতাপ কুমার ঝাঁ। স্বতঃস্পূর্তভাবে তিনি যোগাযোগ করেন তাপসী অধিকারীর বাড়িতে। হাফ ছেড়ে বাচেন তাপসী অধিকারীর পরিবার।
রবিবার রক্ত দান করতে বাড়ি থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে জলপাইগুড়ি শহরে ছুটে যান বছর ২৭ এর যুবক প্রতাপ। রক্ত জোগাড় হতেই তড়িঘড়ি তাপসী দেবীকে ভর্তি করানো হয় জলপাইগুড়ি শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। বড়দিনের দিনে সেখানে সন্তানের জন্ম দেবেন তাপসী দেবী।
রক্ত দিয়ে প্রতাপের গলায় অসহায় মায়ের পাশে থাকার বার্তা। তিনি বলেন, "সামাজিক মাধ্যমে সেই পোস্ট দেখে আমি সেদিনই যোগাযোগ করি তাপসী অধিকারীর বাড়িতে। তারপর আমি তাপসী দেবীর জন্য রক্ত দান করতে জলপাইগুড়ি এসেছি।"
এদিকে স্ত্রীর জন্য রক্ত পেয়ে কৃতজ্ঞতার সুর স্বামী গলায়। তিনি বলেন, "প্রথম বাচ্চা কে হারিয়ে আমরা মানসিক যন্ত্রণায় ছটফট করেছি। যখন দ্বিতীয়বার সন্তানের মুখ দেখাবো ভেবেছি। ঠিক তখনই স্ত্রীর শারীরিক জটিলতায় সেই স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসেছিল। সাক্ষাৎ ভগবান হিসেবে এগিয়ে এসেছেন প্রতাপ বাবু। আমি ও আমার পরিবার সারাজীবন এই রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে পারবো না। আগামীকাল সকালে ডাক্তার ডেলিভারির সময় দিয়েছেন।"
এদিকে রক্ত দিয়ে নিরুত্তর প্রতাপ। তার দাবি, "রক্তদান সামাজিক কর্তব্য। আমার রক্তে পেয়ে এক প্রসূতি মায়ের জীবন বাঁচাবে। ভেবে খুব ভালো লাগছে।"
Dec 25 2023, 12:40