*তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের রূপকার সতীশচন্দ্র সামন্তের জন্মদিনে পরিবার ও স্থানীয় বিধায়কের আক্ষেপের সুর।*
মহিষাদল: তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের রূপকার সতীশচন্দ্র সামন্তের ১২৪ তম জন্মদিন। তার জন্ম ভিটাতেই মহাসমারোহে পালিত হলো জন্মজয়ন্তী।
তাম্রলিপ্ত বা বর্তমান তমলুকের মাটিতে দেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গড়ে তুললেন বিপ্লবী সতীশচন্দ্র সামন্ত। ১৯৪২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর গঠিত হয় এই সরকার। ‘তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার' নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল তাঁর গঠিত নিজস্ব সরকার। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পথিকৃৎ এর পরিবার এখনো অবহেলায়, সাহায্য এখনো পাননি কিছুই। শুধুই জুটেছে আশ্বাস।
গোটা ভারতবর্ষের কেউ যেখানে কোনো অস্থায়ী সরকার গড়তে পারেন নি সেখানে তিনি অখণ্ড মেদিনীপুর জেলা থেকেই গঠন করেছিলেন একটি অস্থায়ী সরকার। এই সরকারের অস্তিত্ব ছিল ১৯৪৪ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
সবার উপরে ছিলেন সর্বাধিনায়ক বিপ্লবী সতীশচন্দ্র সামন্ত। আজকে সতীশচন্দ্র সামন্তের জন্ম দ্বিতীয় প্রস্তুত ছিলেন এলাকার বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী।
তিনি বলেন মহামানব সতীশ চন্দ্র সামন্তের পরিবারের পাশে আরো বেশি করে থাকা উচিত। অন্যদিকে সৌমেন মহাপাত্র বলেন আমরা সব সময়ই সতীশ চন্দ্র সামন্তের পরিবারের পাশে রয়েছি। হলদিয়া বন্দর এর নাম সতীশ চন্দ্র সামন্তের নামেই হওয়া উচিত এই দাবি বারে বারে করা হলেও সেই সমাধান এখনো হয়নি। পরিবার-পরিজন দাবি জানাচ্ছেন দিন আসে দিন যায় শুধুই আশ্বাস পাওয়া যায় কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সফলভাবে কাজ করেছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। ‘৪২-এর ২৯শে ও ৩০শে সেপ্টেম্বর অজয় মুখোপাধ্যায়, সতীশচন্দ্র সামন্ত ও সুশীল ধাড়া— এই তিন বিপ্লবীর নেতৃত্বে মেদিনীপুরের চারটি থানা দখলের অভিযান শুরু হলো। বিনা রক্তপাতে সুতাহাটা থানার পুলিশ আত্মসমর্পণ করলে এই থানাটি বিপ্লবীদের দখলে এলো। রক্ত ঝরিয়ে তমলুক, মহিষাদল ও নন্দীগ্রাম—অন্য তিনটি থানাও কব্জায় চলে এলো।
১৯৪৭ খ্রীস্টাব্দের জুলাই মাসে দিল্লিতে গণ-পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলেন সতীশচন্দ্র। ১৯৪৭-১৯৪৯ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই পরিষদের সদস্য ছিলেন। পরে ১৯৫০-১৯৫২ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত ছিলেন সামরিক পার্লামেন্টের সদস্য। তারপর ভারতবর্ষের প্রথম লোকসভা থেকে পঞ্চম লোকসভা (১৯৫২-১৯৭৬) ছিলেন লোকসভার সদস্য। এই সময়কালে তাঁর উত্থাপিত প্রশ্ন সংখ্যা ২৫ হাজার, প্রবর্তিত বিলের সংখ্যা তিনশো। এরপর ষাটের দশকের শেষদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে সতীশচন্দ্র সামন্ত, অজয় মুখোপাধ্যায়, সুশীল ধাড়া কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে গঠন করেন বাংলা কংগ্রেস। তৈরি হলো যুক্তফ্রন্ট। কিন্তু সতীশচন্দ্র সে সরকারে যোগ দিলেন না।
সতীশচন্দ্রের অন্যতম কীর্তি ১৯৫৯ খ্রীস্টাব্দের ৮ই জুন হলদিয়া বন্দরের সূচনা। সে সময়ের কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী রাজবাহাদুর হলদিয়া বন্দরের নাম রাখতে চেয়েছিলেন “সতীশচন্দ্র বন্দর।” কিন্তু তা হয়নি। তবে একটি জেটি ও একটি রাস্তার নাম সতীশচন্দ্রের নামে হয়েছে। এছাড়া মহিষাদলে একটি রেলস্টেশনের নাম রাখা হয়েছে “সতীশ সামন্ত হল্ট।” আর গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম পাল্টে হয়েছে “সতীশচন্দ্র সামন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত।”
Dec 15 2023, 16:34