বিদ্যালয় নেই বসার জায়গা নেই মিড ডে মিল খাওয়ানোর উপযুক্ত জায়গা তবুও ভোররাত্রি থেকে ভর্তির লাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
নদীয়া:বিদ্যালয়ে নেই বসার জায়গা, নেই মিড ডে মিল খাওয়ানোর জায়গা, কিন্তু তবুও বিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য অন্ধকার রাত থেকে লম্বা লাইন । কোনো ঝাঁ চকচকে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম অথবা কিন্ডারগার্ডেন স্কুল নয়, অতি সাধারণ সরকারি প্রাথমিক বাংলা মাধ্যমে বিদ্যালয়। যেখানে মাঝে মধ্যেই সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর ঘাটতি, নানান অভাব অভিযোগ নিয়ে স্কুল ছুট দের বিদ্যালয় ফেরানোর সরকারি উদ্যোগও।
নদীয়ার শান্তিপুর শহরের বাইগাছিপাড়া কৃত্তিবাস প্রাইমারি বিদ্যালয়ে, পাড়ার ছেলেরাই আশঙ্কা প্রকাশ করছে বহিরাগতদের চাপে তাদের ছেলেমেয়েদেরই ভর্তি করার সমস্যা না হয়ে যায় । প্রশান্ত বিশ্বাস জানাচ্ছেন তার বাচ্চা পলাশকে ভর্তি করার জন্য আজ থেকে ছয় দিন আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অগ্নিশ্বর বসাককে জানতে চেয়েছিলেন তিনি বলেছিলেন আজ সকাল দশটা থেকে ফরম দেয়া হবে। কিন্তু ভোর তিনটা থেকে আশেপাশের পাড়া মানুষজন ভিড় করবেন তা তিনি বুঝতে পারেননি, তাই তিনি প্রধান শিক্ষকের কাছে দাবী করেছেন যাতে পাড়ার ছেলেদের অন্তত ভর্তি করে তারপর বহিরাগতদের ফরম দেওয়া হয়।
সকাল সাড়ে সাতটা র সময় কিছুটা দূর ঢাকা পড়ার থেকে এসে প্রমিলা বিশ্বাস লাইনের ৩৫ তম জায়গা দখল করতে পেরেছেন। ভর্তি নিশ্চিত জেনেও তিনি আগে ভাগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন, কিছুটা দুশ্চিন্তা নিয়ে। তিনি বলেন এই বিদ্যালয়ে নিয়মিত হোম টাস্ক দেওয়া পড়াশোনার খোঁজখবর রাখা বাচ্চাদের জন্মদিন পালন থেকে শুরু করে বিদ্যালয় থেকে পাশ করে অন্য বিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার সময় ফেয়ারওয়েল পর্যন্ত দেওয়া হয়। যা অন্য কোন জায়গায় পাওয়া যায় না।আরো বেশ কিছুটা দূরে বাগানিপাড়া থেকে ভোর সাড়ে চারটের সময় এসেছেন আনোয়ার শেখ তিনি বলেন তাদের এলাকাতে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও সেখানে বাচ্চাদের যথেষ্ট খেয়াল রাখা হয় না। অথচ একটু কষ্ট করে দূরে এখানে আসলে মিড ডে মিলসহ পড়াশোনা এবং শিশুর মানসিক বিকাশ অনেকটাই বৃদ্ধি পায় কারণ তার অপর একটি সন্তান এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে।
মুক্তার শেখ অবশ্য সকলের মুখে এই বিদ্যালয়ের প্রশংসার কথা শুনে বাড়ির পাশে বাইগাছি সেনপাড়া বিদ্যালয়ের ভর্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে এখানে এসেছেন। রাজিয়া বিবি অন্ধকার থাকতে সাড়ে তিনটের সময় এসে ছিলেন স্কুলের বারান্দাতে সেই কারণেই তিনি প্রথম ফর্ম পেয়ে বাচ্চার ভর্তি সুনির্দিষ্ট করেন।
এরকমই নানান অভিমতের মধ্যে দিয়ে বেনজির দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করা যায়। বাইগাছি পাড়া কৃত্তিবাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
তবে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক অগ্নিশ্বর বসাক জানান, যেখানে সরকারি বিদ্যালয় স্কুল ছুটদের ফেরাতে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে সরকারিভাবে সেখানে , এত মানুষ বিভিন্ন পাড়া থেকে বিদ্যালয়ের উপর ভরসা রেখেছে এটা গর্বের বিষয় তবে। তাদেরকে বিগত দিনেও বারংবার জানিয়েছি, নিজ নিজ এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি হয়ে ছাত্র ছাত্রীর সমতা বজায় রাখা দরকার। কারন আমার বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত ১০ জন শিক্ষক শিক্ষিকা থাকলেও উপযুক্ত বসার ঘর নেই এমনকি মিড ডে মিল খাওয়ানো হয় ক্লাস শেষ হবার পর শ্রেণিকক্ষে। তবে অন্য বিদ্যালয়ে তারা কেন যাচ্ছে না সেটা আমার জানা নেই কিন্তু পরিকাঠামগত ভাবে উন্নয়ন না হয়ে এভাবে ক্রমাগত ছাত্র-ছাত্রীদের কতদিন ভালো পরিষেবা দেওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে স্থানীয়দের দুশ্চিন্তা মুক্ত করে তিনি বলেন ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারি বিদ্যালয়ে সীমা না থাকলেও ৭৫ টি ফরম দিতে আমি বাধ্য হয়েছি তবে আশা করি এরই মধ্যে হয়ে যাবে। যদি একান্তই না হয় সে ক্ষেত্রে স্থানীয় দুই কাউন্সিলরের সহযোগিতা নিয়ে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কে বিষয়টি জানিয়ে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তবে পাড়ার ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হবে আগেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন দুটি মাত্র ক্লাস ঘরকে মাঝখানে পার্টিশন দিয়ে চারটে ক্লাসরুম বানানো হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক শিক্ষিকাদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ সকলে তাই এই ভিড়।
Dec 15 2023, 14:45