*ভারতে স্ত্রী রোগজনিত ক্যান্সার: মহিলাদের স্বাস্থ্যের জন্য বাড়তে থাকা উদ্বেগ*
ডা. উপাসনা পালো , অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট – গাইনোকোলজিক অঙ্কোলজি, নারায়ণা হাসপাতাল, আরএন টেগোর হাসপাতাল, মুকুন্দপুর
প্রতি বছর ৬৭,০০০-এরও বেশি মৃত্যুর জন্য সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার দায়ী, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মহিলাদের নিয়মিত স্ক্রিনিং এবং প্রতিরোধ
মূলক যত্নের আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতীয় মহিলাদের জন্য শীর্ষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে সার্ভাইক্যাল এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার।ভারতে স্ত্রীরোগজনিত ক্যান্সার মহিলাদের জন্য একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে সার্ভাইক্যাল ও ডিম্বাশয় ক্যান্সার অন্যতম। সচেতনতা বাড়লেও, ভারতে প্রতি বছর ১.২ লক্ষেরও বেশি নতুন ক্যান্সারের ঘটনা ঘটে, যার ফলে ৬৭,০০০-এরও বেশি মৃত্যু হয়। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে,বিশেষজ্ঞরা
নিয়মিত স্ক্রিনিং, টিকা এবং প্রাথমিক পরামর্শের ওপর জোর দিচ্ছেন।
প্রাথমিক সতর্কতাকে অবহেলা করবেন না: সময়মতো নির্ণয়ের্ণ জীবন রক্ষা করা সম্ভব
এই ক্যান্সারের লক্ষণগুলি অবহেলিত হলে মিস হয়ে যেতে পারে। মহিলাদের অতিরিক্ত বা অনিয়মিত ঋতুস্রাব,মেনোপজ বা যৌন মিলনের পরে রক্তপাত, অস্বাভাবিক যোনিপথ স্রাব,পেট ফোলা, ক্ষুধামান্দ্য অথবা পেটের
আকৃতির আকস্মিক বদ্ধিৃ ইত্যাদি লক্ষণগুলির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কখনও কখনও একটি নিরীহ সিস্ট বা ফাইব্রয়েডও আসলে ক্যান্সার হতে পারে। রক্ত পরীক্ষা থেকেও সংকেত পাওয়া যেতে পারে। সন্দেহজনক কিছু
দেখলে বিলম্ব না করে স্ত্রীরোগ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা, বিশেষ করে সফল অস্ত্রোপচারে, সুস্থ হওয়ার সর্বোত্তম সুযোগ দেয়।
কারণ বোঝা: বয়স, এইচপিভি সংক্রমণ এবং পারিবারিক ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এই ক্যান্সারগুলির কারণ বিভিন্ন। বয়সের সাথে ঝুঁকি বাড়ে এবং এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস)সংক্রমণ সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের প্রধান কারণ। এই ভাইরাস অত্যন্ত সাধারণ এবং অধিকাংশ মহিলা কোনো এক
সময়ে এর সংস্পর্শে আসেন।কিছু ক্যান্সার, বিশেষ করে ডিম্বাশয় এবং স্তন ক্যান্সার, বংশগত হতে পারে।
পুষ্টি ও জীবনধারা বিশ্বব্যাপী ২০–৬০% ক্যান্সার কেসের জন্য খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা দায়ী। বিশেষ করে এন্ডোমেট্রিয়াল এবং
ডিম্বাশয় ক্যান্সারে স্থূলতা এবং খারাপ পুষ্টি বড় ঝুঁকির কারণ। একমাত্র স্থূলতাইপ্রায় ৪০% এন্ডোমেট্রিয়ালক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত। ফলমলূ ও শাকসবজির কম গ্রহণ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের অতিরিক্ত খাওয়া ঝুঁকি
বাড়ায়। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩০% পর্যন্ত কমাতেপারে।
প্রতিরোধ সম্ভব: টিকা, স্ক্রিনিং এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সম্ভব। ডব্লিউএইচও এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা সুপারিশকৃত এইচপিভি টিকা ৯০%
এরও বেশি সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার এবং এইচপিভি স্ক্রিনিংয়ে সমস্যার আগাম শনাক্তকরণ সম্ভব। যাদের পারিবারিক ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে, তারা জেনেটিক টেস্টিং এবং প্রয়োজনে প্রতিরোধমলকূ পদক্ষেপ নিতে পারেন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত চেকআপ ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
আধুনিক চিকিৎসা আশা দেয়: উন্নত সার্জারি, টার্গেটের্গেড থেরাপি এবং নতুন পদ্ধতি চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এখন চিকিৎসা অনেক বেশি কার্যকর। সার্জনরা জটিল অস্ত্রোপচার করতে
সক্ষম। কিছুক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কপি বা রোবোটিক্সের মাধ্যমে মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি দ্রুত সুস্থতার সুযোগ দেয়। কিছু উন্নত ক্ষেত্রে, উষ্ণ কেমোথেরাপি সরাসরি পেটের মধ্যে দেওয়া হয় যাতে ক্যান্সার কোষগুলি আরও কার্যকরভাবে ধ্বংস হয়। অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি টার্গেটের্গেড ওষুধ এবং
ইমিউনোথেরাপির মতো নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিও ব্যবহার করা হচ্ছে।
অনুলিখন: স্বরুপ রায়।
May 01 2025, 09:17