*মেদিনীপুরের ঐতিহ্যশালী শীতের গয়না বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত মহিলারা*
তমলুক: শীতের দিনে গয়না বড়ি তমলুক মহিষাদল সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ঘরে ঘরে চলে তৈরীর কাজ। পূর্ব মেদিনীপুরের ঐতিহ্যশালী এই গহনা বড়ি খেতে ভালবাসতেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সত্যজিৎ রায় সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গেরা। আবার এই গয়না বড়ি জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে উল্লিখিত হয়েছে। বিউলির ডালকে জলে ভিজিয়ে বেটে পোস্ত বা তিলের ওপর দেওয়া হয় গয়না বড়ি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই বড়িতে মজে তমলুক ও মহিষাদলের মানুষেরা।
বঙ্গের ঋতু রঙ্গে সবচেয়ে প্রিয় ঋতু শীত।
শীতকাল মানেই চলে আসে নলেন গুড়, পিঠে পুলি পায়েস সহ বিভিন্ন খাবার দাবার। সেই খাদ্য তালিকায় বড়িরস্থান উপরের দিকেই। আর তা যদি হয় গয়না বড়ি, তাহলে তো আর কথাই নেই। এই বড়ির সঙ্গে মেদনীপুরের মানুষের ভালোবাসা ওতপ্রত ভাবে জড়িত। নবান্ন, বড়দিন বা পৌষমেলার মতোই বাংলার মেয়েদের কাছে শীত ছিল এক উৎসবের ঋতু। আর সেই উৎসবের পুরোধা হল গয়না বড়ি। সাধারনত অগ্রহায়ন মাসের শেষের দিক থেকেই বাড়িতে বাড়িতে লেগে থাকে এই উৎসব।
বিউলির ডাল, পোস্ত, সাদা তিল এবং অন্যান্য মশলার সংমিশ্রনের সঙ্গে মেয়েদের সুদক্ষ হাতের কারুকার্যের নিদর্শন হল এই গয়না বড়ি। বছর পর বছর পেরিয়েও বর্তমান প্রজন্মের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে সেই কারুকার্যের ছাপ।
গয়না বড়ির ইতিহাস অনেক পুরনো ১৯৩০ সালে সেবা মাইতি নামে শান্তিনিকেতনের এক ছাত্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তার মা হিরন্ময়ী দেবী ও ঠাকুমা শরতকুমারী দেবীর তৈরী গয়না বড়ি উপহার দেন। রবীন্দ্রনাথ গয়না বড়ির শিল্পকলা দেখে এতটাই আকৃষ্ট হন যে তিনি গয়না বড়িগুলির আলোকচিত্র শান্তিনিকতনের কলা ভবনে সংরক্ষণ করার অনুমতি চেয়ে হিরণ্ময়ী দেবী ও শরতকুমারী দেবীকে চিঠি লেখেন।এর ফলে গয়না বড়ি চারুকলার নিদর্শন হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একদা বলেছিলেন, গয়না বড়ি শুধুমাত্র দেখার জন্য, খাওয়ার জন্য নয়। তিনি গয়না বড়ির শিল্পকর্মের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার খোটানে আবিষ্কৃত প্রত্নতত্ত্বের শিল্পকর্মের সাদৃশ্য খুঁজে পান এবং গয়না বড়ির প্রদর্শনীর যথাযথ ব্যবস্থা করেন। নন্দলাল বসু গয়না বড়িকে বাংলা মায়ের গয়নার বাক্সের একটি রত্ন বলে বর্ণনা করেন এবং তিনি গয়না বড়ির উপর একটি বই প্রকাশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ১৯৫৪ সালে কল্যাণীতে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ৫৯ তম অধিবেশনে গয়না বড়ি প্রদর্শিত হয়। বংশপরম্পরায় আজও তমলুক মহিষাদল সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বাড়ির মা-বোনেরা শীতের সকালে গয়না বড়ি তৈরি করে।
Dec 23 2023, 12:33