টাটা স্টিল ওয়ার্ল্ড ২৫কে কলকাতা ২০২৫-এ পুরুষদের সামগ্রিক শিরোপা জয় জোশুয়া চেপ্টেগেই
নিজস্ব প্রতিনিধি:শীতল শীতের রবিবারে রবিবার টাটা স্টিল ওয়ার্ল্ড ২৫কে এক রোমাঞ্চকর প্রতিযোগিতার সাক্ষী থাকল—রেকর্ড ভাঙল, চ্যাম্পিয়নরা নিজেদের আধিপত্য প্রমাণ করল এবং ভারতীয় দীর্ঘদূরত্ব দৌড় আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। আন্তর্জাতিক এলিট পুরুষ বিভাগে উগান্ডার জোশুয়া চেপ্টেগেই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেও, দিনটি ছিল ভারতের গুলবীর সিং ও সীমার—দু’জনেই নিজেদের এলিট বিভাগে কোর্স রেকর্ড নতুন করে লেখেন।
ডাবল অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন চেপ্টেগেই শুরু থেকেই গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে নেতৃত্ব দেন এবং কখনও তা ছাড়েননি। তিনি ১:১১:৪৯ সময়ে ফিনিশ করে নিজের প্রথম শিরোপা জেতেন। তাঞ্জানিয়ার আলফন্স ফেলিক্স সিম্বু (১:১১:৫৬) ও লেসোথোর তেবেলো রামাকোঙ্গোয়ানা (১:১১:৫৯)-কে পিছনে ফেলে টানটান লড়াইয়ের পোডিয়াম সম্পূর্ণ করেন। ২০২৩ সালে ড্যানিয়েল সিমিউ এবেনিও-র গড়া ১:১১:১৩ কোর্স রেকর্ড ছুঁতে না পারলেও, চেপ্টেগেইয়ের সংযত ও কর্তৃত্বপূর্ণ দৌড় ইভেন্টে তাঁর আধিপত্য আরও দৃঢ় করে। রেসের বড় অংশে তিনজনই কাছাকাছি ছিলেন—১৫ কিমি বা ২০ কিমিতে কোনও ফারাক ছিল না। তবে ২১.১ কিমি হাফ-ম্যারাথন পয়েন্টে ০১:০০:৪৯-এ অন্যদের সঙ্গে সমান অবস্থানে থেকে শেষ চার কিলোমিটারে গতি বাড়িয়ে জোশুয়া নিজের ছাপ রাখেন।
উগান্ডার ১০,০০০ মিটার ও ৫,০০০ মিটার বিশ্বরেকর্ডধারী জোশুয়া চেপ্টেগেই ১:১১:৪৯ সময়ে ফিনিশ লাইন অতিক্রম করে টাটা স্টিল ওয়ার্ল্ড ২৫কে কলকাতা ২০২৫-এ পুরুষদের সামগ্রিক শিরোপা জয় করেন। ছবিতে আরও রয়েছেন কেনি বেডনারেক, ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট অ্যাম্বাসাডর, টাটা স্টিল ওয়ার্ল্ড ২৫কে কলকাতা এবং সুজিত বসু, মন্ত্রী-ইন-চার্জ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট, ডব্লিউবিএএ।
ইথিওপিয়ার ডেগিতু আজিমেরাও ১:১৯:৩৬ সময়ে টাটা স্টিল ওয়ার্ল্ড ২৫কে কলকাতা ২০২৫-এ মহিলাদের সামগ্রিক শিরোপা জয় করেন। ছবিতে আরও রয়েছেন ভাইচুং ভুটিয়া, টিএসডব্লিউ ২৫কে রত্ন এবং বিবেক সাহায়, প্রেসিডেন্ট, ডব্লিউবিএএ ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, এএফআই।
১০,০০০ মিটার ও ৫,০০০ মিটার জাতীয় রেকর্ডধারী গুলবীর সিং নতুন ইভেন্ট রেকর্ড (১:১২:০৬) গড়ে ফিনিশ লাইনে।
ভারতীয় পুরুষ বিভাগের বিজয়ী ও নতুন ইভেন্ট রেকর্ডধারী গুলবীর সিং (১:১২:০৬), ছবিতে আরও রয়েছেন কেনি বেডনারেক, ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট অ্যাম্বাসাডর।
ভারতীয় মহিলা বিভাগের বিজয়ী ও নতুন ইভেন্ট রেকর্ডধারী সীমা ১:২৬:০৪ সময়ে ফিনিশ লাইনে।
১০ম টাটা স্টিল ওয়ার্ল্ড ২৫কে কলকাতায় রেকর্ড নতুন করে লেখলেন গুলবীর ও সীমা, প্রত্যাশা পূরণ করলেন জোশুয়া
দু’বারের চ্যাম্পিয়ন সুতুমে কেবেদেকে হারালেন ইথিওপিয়ার আজিমেরাও
জোশুয়া চেপ্টেগেই বলেন, “রেকর্ডের চেয়েও জয়টাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কলকাতায় ফিরে এসে জয় পাওয়া আমার জন্য বিশেষ। বেঙ্গালুরুতেও জিতেছি, আর এটি ছিল বিশ্বমানের অ্যাথলিটদের নিয়ে বড় রেস। এই জয় আমাকে পরের ম্যারাথনের প্রস্তুতিতে আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচকতা দেবে।”
আন্তর্জাতিক এলিট মহিলা বিভাগে ইথিওপিয়ার ডেগিতু আজিমেরাও দারুণ পারফরম্যান্সে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সুতুমে আসেফা কেবেদেকে হারান। কলকাতা কোর্সে তৃতীয়বার দৌড়ে, ২০১৭-র বিজয়ী ও পরের বছর চতুর্থ হওয়া আজিমেরাও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়ে ১:১৯:৩৬ সময় করেন। সুতুমে দ্বিতীয় হন ১:২০:২৮-এ, আর মেসেলেচ আলেমাইয়ু ১:২০:৪৮-এ তৃতীয় হয়ে ইথিওপিয়ার ক্লিন সুইপ সম্পন্ন করেন। আজিমেরাও জিতলেও কোর্স রেকর্ড সুতুমের কাছেই থাকে। শুরু থেকেই ডেগিতু দৌড়ের নিয়ন্ত্রণ নেন—১০, ১৫ ও ২০ কিমিতে কয়েক সেকেন্ডের লিড ২২ কিমিতে এক মিনিটে পরিণত হয় এবং ফিনিশে তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে প্রায় ৫০০ মিটার এগিয়ে থাকেন।
ডেগিতু বলেন, “এটা আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল না। পা একটু শক্ত লাগছিল, তাই শুধু শক্তভাবে দৌড়ে যাওয়াতেই মন দিয়েছিলাম। ১০ কিমির পর পা ভালো লাগতে শুরু করে, তখন গতি বাড়াই এবং জিতি। আমি খুব খুশি।”
তবে দিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গল্পগুলো এসেছে ভারতীয় এলিট রেস থেকে। গুলবীর সিং বিরল কর্তৃত্বের দৌড়ে নিজেরই ভারতীয় কোর্স রেকর্ড থেকে দুই মিনিটের বেশি সময় কমান। মসৃণ ছন্দে শুরুতেই ভারতীয় প্যাকের সামনে উঠে এসে, কিছুক্ষণ আন্তর্জাতিক এলিটদের সঙ্গেও দৌড়ান, তারপর ১:১২:০৬ সময়ে ফিনিশ করেন। তিনি ২০২৪-এ নিজের গড়া ১:১৪:১০ রেকর্ড ভেঙে গত দুই মরসুমে তাঁর অসাধারণ উন্নতির প্রমাণ দেন। হারমানজোত সিং (১:১৫:১১) ও সাওয়ান বারওয়াল (১:১৫:২৫) পোডিয়াম পূর্ণ করেন। শুরু থেকেই গুলবীর আলাদা স্তরে ছিলেন—১৫ কিমি থেকেই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে এক মিনিট এগিয়ে, যা ধীরে ধীরে দুই মিনিটে পৌঁছায়। ২১.১ কিমিতে গুলবীরের সময় ছিল ০১:০০:৫৮, হারমানজোতের ০১:০৩:১৭।
জয় নিয়ে এশিয়ান লং ডিস্ট্যান্স ডাবল গোল্ড মেডালিস্ট গুলবীর বলেন, “রেকর্ড হঠাৎ করে হয় না। ধারাবাহিকতা থেকেই আসে। শক্ত সমর্থন, নিবেদিত কোচ ও নিরলস অনুশীলনের সঙ্গে লক্ষ্য একটাই—গতকালের চেয়ে ভালো হওয়া। আমি নিজের জন্য কোনও সীমা বেঁধে দিই না। ডায়েট, ওয়ার্কআউট আর বিশ্রাম—এই-ই আমার সব। অগ্রগতি সময় নেয়, শর্টকাট নেই। ভারত ধাপে ধাপে এগোচ্ছে। যাত্রা দীর্ঘ, আর আমি সবে শুরু করেছি।”
ভারতীয় এলিট মহিলা বিভাগে সীমার জয়ও ছিল সমান জোরালো। নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে দৌড়ে, গত বছরের এশিয়ান ক্রস-কান্ট্রি চ্যাম্পিয়ন ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসের রৌপ্যজয়ী সীমা ১:২৬:০৪ সময়ে ফিনিশ করে ২০১৭-তে সুরিয়া এল-র গড়া ১:২৬:৫৩ দীর্ঘদিনের রেকর্ড ভাঙেন। ব্যবধানই গল্প বলে দেয়—সঞ্জীবনী জাধব ১:৩০:৩৪-এ দ্বিতীয়, নির্মাবেন ঠাকুর ১:৩২:০২-এ তৃতীয়। ফিনিশে সীমা এতটাই স্বচ্ছন্দ ছিলেন যে শক্তিও অবশিষ্ট ছিল—প্রস্তুতি ও টেকনিক্যাল শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। শুরু থেকেই তিনি আলাদা স্তরে ছিলেন—১০ কিমিতে এক মিনিট, ১৫ কিমিতে দেড় মিনিট, ২০ কিমিতে দুই মিনিটের বেশি লিড। ২১.১ কিমিতে ব্যবধান তিন মিনিটে পৌঁছায়। এরপর লক্ষ্য একটাই—ফিনিশ—এবং আট বছরের রেকর্ড মুছে দেন।
সীমা বলেন, “কোর্স রুট বদলানো হয়েছে, এখন এটি আরও চ্যালেঞ্জিং। তবু জয়ের মানসিকতা নিয়েই এসেছিলাম। এখানে কোর্স রেকর্ড করতে পেরে খুব খুশি, তবে আগের মতো কোর্স হলে আরও ভালো করতে পারতাম। জয়ের জন্য শৃঙ্খলা ও ত্যাগ দরকার—একজন অ্যাথলিট হিসেবে আমি সেটাই করি। এখন লক্ষ্য আগামী বছরের এশিয়ান ও কমনওয়েলথ গেমসের যোগ্যতা অর্জন।”
প্রাথমিক ফলাফলসমূহ:
সামগ্রিক আন্তর্জাতিক পুরুষ:
জোশুয়া চেপ্টেগেই (উগান্ডা) ১:১১:৪৯; আলফন্স ফেলিক্স সিম্বু (তাঞ্জানিয়া) ১:১১:৫৬; তেবেলো রামাকোঙ্গোয়ানা (লেসোথো) ১:১১:৫৯; কলিন্স কিপকোরির (কেনিয়া) ১:১২:০২; গুলবীর সিং (ভারত) ১:১২:০৬; ফিকাডু লিচে (ইথিওপিয়া) ১:১২:০৯; উইসলি ইয়েগো (কেনিয়া) ১:১২:১২; হাইমানোট আলেউ (ইথিওপিয়া) ১:১৪:৩৫; নিগুসে আবেরা (ইথিওপিয়া) ১:১৪:৩৮; হারমানজোত সিং (ভারত) ১:১৫:১১।
সামগ্রিক আন্তর্জাতিক মহিলা:
ডেগিতু আজিমেরাও (ইথিওপিয়া) ১:১৯:৩৬; সুতুমে আসেফা কেবেদে (ইথিওপিয়া) ১:২০:২৮; মেসেলেচ আলেমাইয়ু (ইথিওপিয়া) ১:২০:৪৮; কুফতু তাহির (ইথিওপিয়া) ১:২৩:৩২; ডেমিলিউ জেমেনাও (ইথিওপিয়া) ১:২৩:৩৪; নেটসানেত তাফেরে (ইথিওপিয়া) ১:২৩:৫৬; রেডিয়েত ড্যানিয়েল (ইথিওপিয়া) ১:২৪:১৮; আবেরাশ মিনসেও (ইথিওপিয়া) ১:২৪:৪৮; এরগাত হেশে (ইথিওপিয়া) ১:২৪:৫৯; সীমা (ভারত) ১:২৬:০৪।
ভারতীয় পুরুষ:
গুলবীর সিং ১:১২:০৬ (নতুন ইভেন্ট রেকর্ড); হারমানজোত সিং ১:১৫:১১; সাওয়ান বারওয়াল ১:১৫:২৫; কার্তিক কার্কেরা ১:১৬:৪৮; অভিষেক পাল ১:১৭:৫৫; হেমন্ত সিং ১:১৮:৫৩; গৌরব মাথুর ১:১৯:২৯; পুনীত যাদব ১:২২:০০; শঙ্কর স্বামী ১:২৪:০০; অনীশ চ্যান্ডেল ১:২৬:১৫।
ভারতীয় মহিলা:
সীমা ১:২৬:০৪ (নতুন ইভেন্ট রেকর্ড); সঞ্জীবনী জাধব ১:৩০:৩৪; নির্মাবেন ঠাকুর ১:৩২:০২; উজালা ১:৩২:৪৯; ভাগীরথী ১:৩৩:২৩; আরতি পাওয়ারা ১:৩৬:৪৩; ফুলান পাল ১:৪১:১৮।
বিজয় দিবস ট্রফি:
ইন্ডিয়ান নেভি ১ (বিনোদ সিং, প্রকাশ দেশমুখ, নীতেশ কুমার রাঠভা) ৪:০০:৪০; ইন্ডিয়ান আর্মি ১ (সরোজ কুনওয়ার, শিবম সিং, সন্দীপ সিং) ৪:০১:১৫; ইন্ডিয়ান আর্মি ৫ (জীবন সিং, আনন্দ সিং রাওয়াত, ভীম সিং) ৪:০৩:০৩।
পুলিশ কাপ বিজয়ীরা:
পুরুষ দল—টিম ১৩ (কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল, মানস দাস, পঞ্চানন দত্ত) ০:৩৭:১১; টিম ২৭ (প্রসান্ত পাত্র, মো. ওয়াজেদ আলি, রবীন্দ্রনাথ মাইতি) ০:৩৯:২৩; টিম ২৮ (একবুল শেখ, অর্ধেন্দু মল্লিক, কৌশিক মণ্ডল) ০:৪০:৩৯।
মহিলা দল—টিম ১৪ (মৌমিতা খামরাই, তনুশ্রী মুর্মু, পূজা বিশ্বাস) ০:৫৬:৩৯; টিম ১১ (শ্রেয়া নন্দী, জান্নাতুন খাতুন, মৌমিতা প্রামাণিক) ০:৫৭:৩৮; টিম ১৩ (তুস্মিতা রায়, বিউটি রায়, জয়শ্রী হাঁসদা) ১:০১:৩২।
রান ইন কস্টিউম:
সোলো: ১ম—ইন্দ্রাক্ষী হালদার; ২য়—সৌমি দাস
গ্রুপ: ১ম—Run for Pause; ২য়—GD Birla
ছ
বি:সঞ্জয় হাজরা
4 hours ago
- Whatsapp
- Facebook
- Linkedin
- Google Plus
1