*নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠকে সাড়ে ১৪ বছরে তাঁর সরকারের কাজের খতিয়ান প্রকাশ ,মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের*
ডেস্ক : ২০২৬ এ বাংলায় বিধানসভা ভোট।তবে এসআইআর ইস্যুতে ইতিমধ্যেই বাংলায় যেন ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। এমন আবহে নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বিগত সাড়ে ১৪ বছরে তাঁর সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন,"ক্ষমতায় আসার আগে জনগণকে আমরা কী বলেছিলাম, আর এই সময়ে আমরা কী কী কাজ করেছি, সেটা মানুষকে জানানো আমাদের নিজেদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে মনে করি। তাই এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করা হল।"
২০১১ থেকে ২০২৫, মুখ্যমন্ত্রী হয়ে আসার পর থেকেই রাজ্যের মানুষের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, কৃষক বন্ধু, পড়ুয়াদের ক্রেডিট কার্ড-সহ মোট ৯৪টি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে সরকার। কীভাবে রাজ্যের স্বাস্থ্য, শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ করে চলেছে এদিনের বৈঠকে সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি।
এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে ভিডিও প্রকাশ করে ১৪ বছরে সরকারের 'উন্নয়নের পাঁচালি' তুলে ধরা হয়। উন্নয়নের পাঁচালীর ওপর সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইমন চক্রবর্তী। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "আগেকার দিনে সন্ধ্যেয় গ্রামে পাঁচালি পড়া হত। গ্রামের দিকে এখনও হয়তো হয়, হারিয়ে যেতে বসা সেই গৌরবকে ধরে রাখতে এমন পাঁচালির ভাবনা।আগের দিনের গৌরবকে আমরা তুলে এনেছি। বাংলার মনীষীদের ছোঁয়া তাতে থাকছে।"
উন্নয়নের পাঁচালি’ মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘২০১১ সালে যখন এসেছিলাম তখনের থেকে এখন অর্থনৈতিক সাফল্য ভাল। ২০১১ সাল থেকে ৫.৩১%, সোশ্যাল সেক্টর ১৪.৪৬% কৃষি ৯% এর বেশি খরচ বেড়েছে। এক কোটি ৭২ লক্ষ মানুষকে দারিদ্রসীমার ওপরে নিয়ে এসেছি। দারিদ্রসীমার বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে। রাজ্যে ২ কোটির বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। ইকনমিক করিডর থেকে আরও ১ লক্ষ লোক চাকরি পাবে। দেউচাতে এক লক্ষ চাকরি হবে৷’’
বৈঠকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়েও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, জিএসটি বাবদ কেন্দ্র রাজ্যেরও টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। তারপরও রাজ্যের প্রাপ্য প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। তা সত্ত্বেও নিজস্ব উদ্যোগে আমরা কর্মশ্রী, বাংলার বাড়ির মতো প্রকল্পগুলি চালু রেখেছি।আমরা পর পর চারবছর এক নম্বরে ছিলাম। তাই তো ওরা বাংলার টাকা বন্ধ করে রেখেছে।"
একই সঙ্গে কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আশা করব, আমাদের প্রাপ্য টাকাটা দেবেন। ইলেকশন তো চলে এল। আর কবে টাকা দেবেন? ফেব্রুয়ারিতে দেবেন? যাতে কাজ করতে না পারি। তারপর আবার টাকাটা ফেরৎ নিয়ে নেবেন। চালাকিটা আমরাও বুঝি।"
বিএলও ও রাজ্যবাসী-সহ এসআইআর আতঙ্কে অসুস্থ ১৩ জন ভর্তি হাসপাতালে। মঙ্গলবার নবান্ন থেকে তাঁদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মৃত ২ বিএলওর পরিবার ২ লক্ষ টাকা নিয়েছে। ১ জন বাকি আছে। তাঁরা চাইলে নিয়ে যেতে পারেন। ৩৯ জন রাজ্যবাসীর আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে। ১৩ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বিএলও-সহ। মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। অসুস্থরা পাবেন ১ লক্ষ টাকা।” এরপরই মমতা বলেন, “দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে যদি সাহায্য করা হয় এখন কেন করব না? মনে রাখতে হবে, মেয়েরা সংসার সামলায়, সরকারও।”
সরকারের উন্নয়নের রিপোর্ট প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন ভোটের আগে বিজেপি ও তার শরীক দলগুলির অর্থসাহায্য দেওয়া নিয়ে বিজেপিকে বিঁধেছেন । বিহারে ভোটের আগে টাকা দেওয়া নিয়ে বলেন, “বিজেপি যেটা দেখানোর জন্য করেছে বিহারে ভোটের আগে ১০ হাজার, পরে বুলডোজার। আমরা বছরে ১২ হাজার টাকা দিই। ৫ বছরে ৬০ হাজার টাকা (শুধু মাত্র জেনারেল কাস্টের জন্য)।”
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্তা নিয়েও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ঘরে ফিরে আসা শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্য করার পাশাপাশি তাঁদের কর্মশ্রী প্রকল্পের অধীনে কাজ দেওয়া হয়েছে। জুড়ে দেওয়া হয়েছে শ্রমশ্রী ও কর্মশ্রী প্রকল্প। তিনি বলেন, “যাঁদের মারধর, অত্যাচার থেকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছিল, গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অনেককে আবার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরে ফিরে আসা সেই ৩১ লক্ষ ৭২ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে ৫ হাজার টাকা করে অর্থ সাহায্য করা হয়েছে। তাঁদের কাজও দেওয়া হয়েছে।”
নবান্ন সভাঘরের এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব-সহ প্রতিটি দফতরের মন্ত্রী, সচিব, আমলা, প্রতিটা জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ।










6 hours ago
- Whatsapp
- Facebook
- Linkedin
- Google Plus
0- Whatsapp
- Facebook
- Linkedin
- Google Plus
1.3k