May 18 2023, 17:33
*শতাব্দী প্রাচীন মহিষাদলের রথের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে*
মহিষাদল : হাতেগোনা আর মাত্র একদিন পরেই রথযাত্রা। আর এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিশেষ প্রস্তুতিতে মেতেছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের বাসিন্দারা।পুরী,মাহেশের পরেই উঠে আসে শতাব্দী প্রাচীন এই মহিষাদলের রথের নাম। তাই এখন বিশেষ উন্মাদনা জেগেছে সমগ্র মহিষাদলবাসীর মনে।
বৃহস্পতিবার মহিষাদলের প্রাচীন রথযাত্রার বিষয় নিয়ে মহিষদল পঞ্চায়েত সমিতির সভা কক্ষে প্রস্তুতি বৈঠকের পাশা রথ পরিদর্শনে স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি ও রথ পরিচালন কমিটি সদস্যরা।এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মহিষাদলের বিধায়ক তিলককুমার চক্রবর্তী, বিডিও যোগেশচন্দ্র মন্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিউলি, মহিষাদল থানার ওসি প্রলয় চন্দ্র সহ অন্যান্যরা। আগামী ২০ জুন রথ উৎসব। সেই রথ উৎসবকে ঘিরে প্রস্তুতি শুরু করলো মহিষাদল রাজবাড়ী ও মহিষাদল রথ পরিচালন কমিটি।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানাযায়, রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের সহধর্মিণী ধর্মপ্রাণ রানী জানকি দেবী মহিষাদলের রথের সূচনা করেছিলেন। এরপর ১৮০৪ সালে ওই রানীর মৃত্যুর পর অল্পকালের জন্য মতিলাল পাঁড়ে মহিষাদলের রাজত্ব পান।সেই সময় তিনি একটি সুন্দর ধরনের সতেরো চূড়োর রথ তৈরি করান। পরে ১৮৫২ সালে ততকালীন রাজা লছমন প্রসাদ গর্গ বাহাদূর ওই সতেরো চূড়ো রথের সংস্কার করার জন্য কোলকাতা থেকে কয়েকজন চীনা কারিগরকে অনিয়েছিলেন। সে সময় প্রায় চার হাজার টাকা খরচ করে তিনি রথের চারধারে চারটি মূর্তি বসিয়েছিলেন। ১৯১২ সালে স্হানীয় মিস্ত্রি মাধব চন্দ্র দে রথের সামনের কাঠের ঘোড়া দুটিকে তৈরি করেছিলেন।
যা এখনও পর্যন্ত রথ বিগ্রহের মধ্যে দেখা যায়।রথের মধ্যে এখন সেকালের তৈরি ঘোড়া থাকলেও এখন আর সেকালের সেই সতেরো চূড়োর রথ আর নেই।এখন মহিষাদলের রথ তেরো চূড়োয় পরিণত হয়েছে।সেকালের সতেরো চূড়োর রথের একএকটি চাকার উচ্চতা ছিল প্রায় ৬ ফুটের বেশি।এখন যা ৪ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে।এখানকার রথের মোট চাকার সংখ্যা ৩৪টি। পুরী,মাহেশের পরই ঐতিহ্যের দিক থেকে উঠে আসে মহিষাদলের রথের কথা। তবে গত বেশকয়েকবছর ধরে এই মহিষাদলের রথের অবস্থা খুব করুন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। আগে সমগ্র জেলাজুড়ে এই মহিষাদলেই একমাত্র রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হত। কিন্তু বর্তমানে জেলার আনাচেকানাচে গজিয়ে উঠেছে নানান সংস্হার রথ। যারফলে আগের মতো এখন এখন তেমন আর ভীড় জমেনা এখানে। তবে সেকালের মতো ভীড় না জমলেও এখনও জেলার অন্যান্য রথের থেকে ভীড়ে নজরকাড়ে এই মহিষাদলের রথ। বছরের পর বছর এগালেও এখনও সেই আগের মতোই থেকে গেছে রথের প্রাচীন রীতিনীতি। প্রাচীন রীতি মেনেই এখনও রথের আগের দিন ঘটা করে পালন করা হয় লেত উৎসব। এদিন রাজ পরিবারের সদস্যদের উপস্হতিতে রথে স্হাপন করা হয় রাজকীয় কলস এবং রথে বাঁধা হয় কাছি।
মহিষাদলের রথের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এখানকার রথে চড়ে যান রাজপরিবারের কূলদেবতা শ্রী গোপাল জিঊ এবং তাঁর সাথে যান জগন্নাথদেব।তবে যাননা বলরাম ও সুভদ্রা। রথে চড়ে গোপাল জিঊ ও জগন্নাথদেব যান প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গুন্ডিচাবাটিতে নিজের মাসির বাড়িতে। সেখানে একসপ্তাহ ধরে নিজের মাসিরবাড়িতে আদরযত্ন খাওয়ার পর ফেরত রথের দিন রথে চড়ে আবার ফিরে আসেন গোপাল জিঊ ও জগন্নাথদেব। রাজাদের আগেকার মতো সেই শাসন ব্যবস্থা এখন আর নেই। কিন্তু রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন রীতি। রথের দিন রাজপরিবারের কোনো সদস্য রথের রশিতে টান দেওয়ার পরই শুরু হয় রথ টানার কাজ। এরপর রথের সারথির নির্দেশ মেনে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গুন্ডিচাবাটিতে মাসির বাড়িতে পৌঁছায় রথ। রথে আগে রাজার সঙ্গে যেত হাতী, ঘোড়ার মতো নানাবিধ কিন্তু এখন সেসব না গেলেও পালকি চড়ে আগের সেই রীতি মেনে রথের রশিতে টানা দিতে যান রাজারা।

May 19 2023, 14:47