আসল গুড়ের কদর না থাকায় ভেজাল গুড় তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন খেজুর গুড়ের শিউলিরা
এসবি নিউজ ব্যুরো: নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়ার নলেন গুড় এক সময় ছিল জগৎ বিখ্যাত । কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে খেজুর গুড়ের শিল্পীরা ব্যস্ত থাকেন শীতকাল জুড়ে খেজুর গাছের রস নিয়ে । এই রস তারা জাল দিয়ে তৈরি করেন নলেন গুড় । এই নলেন গুড় রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে পৌঁছে যায় । নলেন গুড় তৈরি করতে যে পরিমাণ খরচ হয় তা পরিশ্রম করে শিউলিরা এখন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। সেই জন্যেই লসে ভুগতে হয় খেজুর গুড়ের শিল্পীদের।
অন্যদিকে মাজদিয়া হাটে হাজার হাজার শিউলিরা যখন খেজুর গুড় নিয়ে যান তখন ঠিকভাবে দাম পান না । যেখানে একজন চাষী খেজুর রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন । সেখানে দেখা যায় মাজদিয়ার খেজুর গুড়ের হাটে সেই গুড়ের দাম কেজিপ্রতি আশি টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে । ফলে যে সমস্ত খেজুর গুড়ের শিল্পীরা প্রতি গাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে মহাজনের কাছ থেকে লিজ নিচ্ছেন তারা সেই টাকা শোধ করতে পারছে না। তাইতো বাধ্য হয়েই এই খেজুর গুড়ের মধ্যে চিনি মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন খেজুর ঘুরে শিল্পীরা। অরিজিনাল গুড়ের সঠিক দাম না পাওয়ায় শিল্পিরা বাধ্য হচ্ছেন ভেজাল গুড় তৈরি করতে । সেই জন্যেই মাজদিয়ার নলেন গুড় তার স্বাদ হারিয়ে ফেলছে । ব্যবসায়ীরা জানেন কত কম দামে তারা এই গুড় কিনবেন ।
একদিকে অল্প দামে খেজুরের গুড় বিক্রি করা, অন্যদিকে নিজেদের পরিশ্রম বাচিয়ে বাজারের টিকে থাকার লড়াই বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা খেজুরের গুড়ে চিনি ভেজাল দিতে । অন্যদিকে ভেজালের গুড় বাজারে ছড়িয়ে পড়াই কৃষকরা সেই ভাবে গুড় করতে পারছেন না । নতুন করে আর কোন শিউলি আর এই কাজে নিজেদেরকে যুক্ত করতে চাইছেন না। কারণ খেজুর গাছ কেটে ভোরবেলায় শীতের মধ্যে রস নামিয়ে জাল দেবার পর বিক্রি করে সেই অর্থে লাভবান হতে পারছে না। শিবনিবাসের এক খেজুর গুড়ের শিল্পী সমীর দাস তিনি বলছেন, এমনিতেই এ বছর শীত পড়েনি যা শীত পড়েছে তাতে যেটুকু রস ও গুড় তৈরি হচ্ছে তাতে ৩০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করে মোটামুটি একটা লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে । তবে তিনি আক্ষেপ করে বলছেন এই খেজুর গুড়টা যদি আমি মাজদিয়া বাজারের গুড়ের হাটে নিয়ে যায় আমার গুড় লসে বিক্রি করতে হবে। ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেও আমি সামান্য লাভ করতে পারছি। ।
আর মাজদিয়ার গুড়ের হাটে ব্যবসায়ীদেররা যখন খেজুর গুড় কিনছেন কেজি প্রতি ৮০ টাকা দরে তখন তারা তো জেনে শুনেই ভেজাল গুর কিনছেন । অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা কম দামে গুড় কিনতে পারায় আসল গুড়ের দিকে আর নজর দিচ্ছেন না । শিল্পীদের ধারণা এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই হারিয়ে যাবে খেজুরের নলেন গুড় ।
Jan 18 2024, 19:54