Dec 06 2023, 15:40
আবারো এক মানসিক রোগীকে পরিবারের অনুমতি ছাড়াই ভুল বুঝিয়ে নির্বিজকরণ করার অভিযোগ, পূর্বের ঘটনার অভিযুক্ত সেই দুই আশাকর্মী সহ ব্লক স্বাস্থ্য কে
নদীয়া:সম্প্রতি নদীয়ার ফুলিয়া ব্লক হাসপাতালে আড়বান্দি এক নম্বর পঞ্চায়েত এলাকার চাঁদড়া রায়পাড়া এলাকায় এক আদিবাসী বৃদ্ধ কে করণা ভ্যাকসিনের নামে ভুল বুঝিয়ে নির্বিজকরণ করা, এবং রক্ত ক্ষরণরত অসুস্থ অবস্থায় অমানবিকভাবে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে পরিবারের পক্ষ থেকে শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জমা করে ওই এলাকারই দুইআশা কর্মী সবিতা দেবনাথ এবং দিপালী দেবনাথ এর বিরুদ্ধে।
ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা থেকে শুরু করে, শাসক বিরোধী সব দলেরই জনপ্রতিনিধিরা। এরপর আদিবাসীদের পক্ষ থেকে ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বি এম ও এইচ পূজা মৈত্রের অপসারণ দাবি করে, ২ আশা কর্মীর শাস্তির দাবিতে শতাধিক আদিবাসীদের বিক্ষোভ হয় গত চৌঠা ডিসেম্বর। গতকাল স্বাস্থ্য আধিকারিকের নামে অশ্লীল পোস্টার পড়ে হাসপাতালে মধ্যে যা নিয়ে সরব হন তিনি। এর আগে সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে বক্তব্য না দিলেও তিনি বলেন যা ঘটেছে সবটাই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী। কিন্তু গত কালকের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ক্যামেরার সামনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন হাসপাতালে নতুন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জমায়েত করেছে যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অশ্লীল পোস্টার প্রসঙ্গে বলেন, যারা আগের দিন বিক্ষোভ আন্দোলনের শামিল হয়েছিলেন তাদের মুখের ভাষা , এবং অশ্লীল পোস্টার আলাদা কিছু নয়। সবটাই পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।গতকাল সন্ধ্যার ঘটনা ছাপিয়ে গেল সমস্ত কিছুকে। শান্তিপুর থানায় আবারও লিখিত অভিযোগ জমা পড়লো, ওই দুই আশা কর্মীর বিরুদ্ধে ভুল বুঝিয়ে নির্বিজকরনের প্রায় একই রকম অভিযোগ এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গাফিলতি প্রসঙ্গ তুলে। তবে এবারের ঘটনা আরও বেশি অমানবিক, মনে করছেন এলাকাবাসীরা, তারা বলেন সরকারি এই উদ্যোগ কে তারা সাধুবাদ জানান কিন্তু সেক্ষেত্রে সমাজের সুস্থ স্বাভাবিক এবং সন্তান ধারণে উপযুক্ত এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই সচেতন করা উচিত এবং তাদের মতামত নিয়ে তবেই এগুলো উচিত। গ্রামে আজ পর্যন্ত কোনদিন এ ধরনের অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামই হলো না অথচ ৬৩ বছরের বৃদ্ধ যিনি বিগত ৪২ বছর ধরে নিঃসন্তান রয়েছেন এমন এক মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ কে নির্বিজ করে আদৌ জন্মনিয়ন্ত্রণ সরকারি মহৎ উদ্যোগ কতটুকু কার্যকরী হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তারা।
গতকাল সন্ধ্যায় দিকনগর বাসী যমুনা দেবনাথ তার মানসিক সমস্যাযুক্ত ভাই খোকন দেবনাথ ও তার স্ত্রীকে নিয়ে এসে শান্তিপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা করেন, ওই দুই আশা কর্মীর শাস্তির দাবিতে এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গাফিলতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তিনি বলেন পরের বাড়িতে বাসন মেজে খায় তার ভাই, ভাই এবং তার স্ত্রী দুজনেই মানসিক সমস্যা যুক্ত একথা এলাকার সকলেই জানে । সেক্ষেত্রে অভিভাবক হিসাবে আমাদের কাউকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এমনকি নির্বিজ করনের পর রক্ত ক্ষরণ হলেও তার প্রতিকার হিসাবে ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা দেননি তারা।
এলাকার বাসিন্দা জোসেফ মন্ডল সরকারি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কৃতিত্ব বৃদ্ধি করতে গিয়েই আশা কর্মীদের ওপর এ ধরনের চাপ দেওয়া হয়ে থাকে , তাই মানসিক ভারসাম্যহীন পড়াশোনা না জানা আদিবাসী বৃদ্ধ, নেশাগ্রস্থ মানুষ, এ ধরনের ব্যক্তিদের খুঁজে এই কাজ করিয়ে আদতেও সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। অন্যদিকে সরকারি কমিশন পেয়ে আশা কর্মীরা সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা মানবিকতা ভুলে আসক্ত হয়ে পড়ছেন সংখ্যা পূরণে।
তবে বিষয়টি নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করেছে বিশেষভাবে সক্ষমদের বিভিন্ন সংগঠন, তারা জানাচ্ছেন অনেকেই অভাবে তাড়নায় অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় সার্টিফিকেট দেরিতে পান কিন্তু, মানসিক ভারসাম্য হোক বা অন্য ধরনের শারীরিক সমস্যা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষদের বাদ দিয়ে তাদের ওপর এ ধরনের প্রয়োগ করা মানে এক প্রকার তাদের অবজ্ঞা করা। এ ব্যাপারে আগামী দিনে তারাও পথে নামবেন বলেই জানিয়েছেন।
বি এম ও এইচ পূজা মৈত্র কে জানতে চাইলে তিনি আগের মতই বলেন, আর ডাক্তার পূজা মৈত্র ভ্যাসেক্টমি প্রক্রিয়ার জন্মদাত্রী নন। এটি একটি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। ১৯৭৪ সাল থেকে চলছে। সমস্ত রাজ্যেই চলছে,এখনো,যদিও ২০১৩ থেকে প্রসিডিওর আরও সূক্ষ্ম হয়েছে। এবারের ভ্যাসেক্টমি(NSV) ড্রাইভও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নির্দেশে,জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের আয়োজনে শান্তিপুর ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তর আয়োজন করেছে। Acmoh রাণাঘাট স্যার নিজে এই প্রসিডিওর করেছেন।তাই এখানে ডাক্তার পূজা মৈত্র বা কোন ব্যক্তিবিশেষের নির্দেশ ব্যাপারটা নেহাতই জোলো,এটি একটি সরকারি প্রোগ্রাম মাত্র।আর এই প্রক্রিয়ায় কোন অন্ডকোষ কেটে ইত্যাদি নেওয়া হয় না। শুধু একটা নালি বেঁধে দেওয়া হয়। এই ধরনের স্লোগান বা পোস্টারের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা ব্লক ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে।
যদিও গোটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ডেপুটি সিএমওএইচ আমাদের জানান সমস্ত বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন।
তবে ওই দুই আশা কর্মী প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও আমাদেরকে ফোনে জানিয়েছেন, অভিযোগকারী দুটি পরিবারেরকেই তারা এলাকাগতভাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ অন্যান্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন এর আগে. কিন্তু এক্ষেত্রে কিবে কারা তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে অভিযোগ করাচ্ছেন তা তাদের জানা নেই তবে আইনের উপর ভরসা আছে। তারা যে সিদ্ধান্ত নেন সেটাই মাথা পেতে নেবেন তারা।
Dec 15 2023, 19:47