*হিন্দুধর্ম – একটি প্রতিবেদন*
ডেস্ক : সাধারণভাবে আমরা বিশ্বাস করি যে বিশ্বাসকে আমরা ‘ধারণ’ করি তাই আমাদের ধর্ম। এই ধর্ম আধ্যাত্মিক ও আনুষ্ঠানিক – এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। আধ্যাত্মিক ধর্ম হলো – যা আমাদের অন্তরের গভীরে নিহিত থাকে। আর আনুষ্ঠানিক ধর্ম হল – যা বিভিন্ন আচার ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা প্রকাশ করি। হিন্দুধর্ম ভারতীয় উপমহাদেশীয় ধর্ম বা জীবনধারা। এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম, যার অনুসারী সংখ্যা ১২০ কোটিরও বেশি, বা বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার ১৫-১৬%, যারা হিন্দু নামে পরিচিত। হিন্দুধর্মকে বিশ্বের প্রাচীনতম জীবিত ধর্ম হিসেবে দেখা হয়।
হিন্দুধর্ম হল বিভিন্ন দর্শন এবং ধারণা, আচার, বিশ্বতাত্ত্বিক ব্যবস্থা, তীর্থস্থান এবং বৈচিত্র্যময় চিন্তাধারা যা ধর্মতত্ত্ব, অধিবিদ্যা, পুরাণ, বৈদিক যজ্ঞ, যোগব্যায়াম, আচার এবং মন্দির নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করে। ধর্মীয় আচারগুলো মূলত ধর্ম (নৈতিকতা), অর্থ (সমৃদ্ধি), কাম (আকাঙ্খা) ও মোক্ষ (ঈশ্বর প্রাপ্তি) এই চারটি অর্জনের লক্ষ্যে পালন করা হয়, যাকে একসাথে বলা হয় পুরুষার্থ; সেইসাথে আছে কর্ম এবং সংসার (মৃত্যু ও পুনর্জন্মের চক্র)। যজ্ঞ,ধ্যান,পূজা,কীর্তন, ইষ্টনাম জপ,তীর্থযাত্রা প্রভৃতি আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দয়া, সংযম, ধৈর্য, প্রাণীর প্রতি অহিংসা ইত্যাদি চিরন্তন নৈতিক জীবনাচরণের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাহ্যিক আচরণ পালন অপেক্ষা মোক্ষ প্রাপ্তির উপায়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়ে, যা অর্জনের জন্য কেউ কেউ জাগতিক বস্তুগত সম্পদ ত্যাগ করে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করে থাকে। তাই বলা হয়, হিন্দুত্ব শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, একটা বিশ্বাস – যা মানুষের হৃদয়ের গভীরে নিহিত থাকে। হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলো শ্রুতি (শোনা) এবং স্মৃতি (স্মরণীয়) প্রধানত দুটি ভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।বেদ, উপনিষদ্,পুরাণ,মহাভারত,রামায়ণ,শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা প্রভৃতি এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে বেদ হচ্ছে সর্বপ্রধান, সর্বপ্রাচীন ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ। আবার ছয়টি আস্তিক দর্শন রয়েছে যা বেদের স্বীকৃতি দেয় – যথা: সাংখ্য,যোগ,ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা এবং ব্রহ্মসূত্র। এই সব মিলিয়েই গড়ে উঠেছে বিশ্বের প্রাচীন সনাতন ধর্ম যাকে সাধারণভাবে আমরা হিন্দু ধর্ম বলি।
Dec 17 2024, 10:14