*রাষ্ট্রপতি ভবনে ১৩৪তম ডুরান্ড কাপ ট্রফি-র শুভ সূচনা*
Khabar kolkata sports Desk : গৌরবময় ঐতিহ্যের এক মুহূর্তে। শুক্রবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি ভবন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে ডুরান্ড কাপের তিনটি ঐতিহাসিক ট্রফির শুভ সূচনা করেন। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এশিয়ার প্রাচীনতম ও ভারতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ফুটবল প্রতিযোগিতা ১৩৪তম ইন্ডিয়ান অয়েল ডুরান্ড কাপ-এর সূচনা হল।
এই নিয়ে পরপর দ্বিতীয় বছর রাষ্ট্রপতি এই প্রতীকী কর্মসূচি উদ্বোধন করলেন। যা ক্রীড়া, সেনা ও জাতীয়তাবাদের অনন্য মেলবন্ধন হিসেবে ডুরান্ড কাপের চিরন্তন গুরুত্বকে করে। স্বাধীনোত্তর যুগে দেশের সর্বোচ্চ সামরিক প্রধানের সঙ্গে ডুরান্ড কাপের সরাসরি সম্পর্কের ঐতিহ্যও এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বজায় রইল।
RBCC-র এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান, সেনা প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল অমর প্রীত সিং, এবং পূর্ব কমান্ডের GOC-in-C ও ডুরান্ড কাপ আয়োজক কমিটির পৃষ্ঠপোষক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর.সি. তিওয়ারি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং বিশিষ্ট ভারতীয় ফুটবলার সন্দেশ ঝিঙ্গান।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর ভাষণে ডুরান্ড কাপকে ভারতের ফুটবল ঐতিহ্য এবং সশস্ত্র বাহিনীর ক্রীড়া প্রতিশ্রুতির জীবন্ত প্রতীক বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
“ফুটবল কেবল একটি খেলা নয়, এটি এক আবেগ। এই খেলাটি কৌশল, সহনশীলতা এবং দলগত প্রচেষ্টার প্রতিফলন। ডুরান্ড কাপের মতো প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র খেলাধুলার চেতনা বিকাশ করে না, বরং নতুন প্রতিভাদের জন্য একটি মঞ্চও তৈরি করে।” তিনি সশস্ত্র বাহিনীর ডুরান্ড কাপকে বাঁচিয়ে রাখার এবং উৎসাহিত করার ভূমিকাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
জেনারেল অনিল চৌহান বলেন,
“ডুরান্ড কাপ হল বীরত্ব, শৃঙ্খলা ও ঐক্যের উত্তরাধিকার যা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও জাতির শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। রাষ্ট্রপতির উপস্থিতি আমাদের জন্য গর্বের বিষয় এবং ক্রীড়া, পরিষেবা ও ভারতের আত্মার মধ্যে চিরন্তন সম্পর্কের প্রতিফলন।”
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর.সি. তিওয়ারি বলেন,
“ডুরান্ড কাপ কেবল একটি ফুটবল প্রতিযোগিতা নয়, এটি ভারতের ঐক্য ও বৈচিত্র্যের উৎসব, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চরিত্র গঠনের বিশ্বাস এবং শৃঙ্খলা, দলবদ্ধতা ও সহনশীলতার চিরকালীন মূল্যবোধের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার দায়িত্ব।”
সন্দেশ ঝিঙ্গান, যিনি জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন, বলেন,
“আজ আমরা শুধু একটি ট্রফি উন্মোচনের জন্য একত্রিত হইনি, বরং শতাব্দীপ্রাচীন এক ঐতিহ্যের উদযাপন করছি, যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অটুট নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ ভারতীয় ফুটবলের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।”
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভবনিশ কুমার, দিল্লি অঞ্চলের GOC ও ডুরান্ড কাপ স্ট্যান্ডিং ওয়ার্কিং কমিটির চেয়ারম্যান বলেন,
“ডুরান্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট সোসাইটি আমাদের দেশে ফুটবল প্রচারে শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। আমরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সমস্ত দলের জন্য সফল ও প্রাণবন্ত ম্যাচের শুভকামনা জানাই।”
এই তিনটি সম্মানজনক ট্রফি – ডুরান্ড কাপ, রাষ্ট্রপতি কাপ এবং শিমলা ট্রফি – এবার যাত্রা শুরু করবে পাঁচটি আয়োজক রাজ্য জুড়ে:-
পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, অসম, মেঘালয় ও মণিপুর।
২৩ জুলাই ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতার আগে এই ট্রফি ট্যুর জনসাধারণের উৎসাহ ও গর্ব জাগিয়ে তুলবে।
ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ২৩ আগস্ট, ২০২৫।
স্বপ্নের ঐতিহ্য, সম্ভাবনার মঞ্চ
১৩৭ বছরের বেশি সময় ধরে, ডুরান্ড কাপ কেবল একটি টুর্নামেন্ট নয় – এটি ভারতের তরুণ ফুটবল প্রতিভার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম। ভারতের অনেক কিংবদন্তি ফুটবলারের জাতীয় স্তরে পথচলা শুরু হয়েছিল এখান থেকে।
এ বছর প্রথমবারের মতো, ডুরান্ড কাপ পাঁচটি রাজ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যখন ভারতীয় ফুটবল নতুন তারকা ও নতুন প্রেরণার সন্ধানে, তখন এই প্রতিযোগিতা আবারও একটি জাতি গঠনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে – যেখানে প্রত্যন্ত প্রান্তের অ্যাকাডেমি, পরিষেবা দল ও রাজ্য ক্লাবের খেলোয়াড়েরা তাদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে।
ক্রীড়া, সেবা ও আত্মত্যাগের উৎসব
দুরান্ড কাপ হলো শৃঙ্খলা, ঐক্য ও ক্রীড়া শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। আজকের শুভ সূচনা অনুষ্ঠানে সামরিক শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতি প্রমাণ করল সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিভা লালনে তাদের প্রতিশ্রুতি। ট্রফিগুলোর যাত্রার মধ্য দিয়ে ভারতের ফুটবল আবেগকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে এই ১৩৪তম ইন্ডিয়ান অয়েল ডুরান্ড কাপ।
ডুরান্ড কাপ সম্পর্কিত তথ্য
ডুরান্ড কাপ হলো ভারতের ফুটবল ঐতিহ্যের এক গর্বিত প্রতীক, এশিয়ার প্রাচীনতম ও বিশ্বের তৃতীয় প্রাচীনতম ফুটবল টুর্নামেন্ট। এটি ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে আয়োজিত হয় এবং শতবর্ষ ধরে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল প্রতিভার জন্মস্থান হিসেবে কাজ করেছে।
প্রথমবার এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ১৮৮৮ সালে শিমলায়। পরে এটি ১৯৪০ সালে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয় এবং সাত দশকেরও বেশি সময় সেখানেই থেকে যায়।
২০১৯ সালে, এটি পূর্ব কমান্ড-এর অধীনে কলকাতায় স্থানান্তরিত হয় – যাকে ভারতের ফুটবলের ‘মক্কা’ বলা হয়। এরপর থেকে প্রতিযোগিতাটি একক শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহুরাজ্যব্যাপী ক্রীড়া উৎসবে পরিণত হয়েছে।
এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দল পায় তিনটি সম্মানজনক ট্রফি:
ডুরান্ড কাপ (ঘূর্ণায়মান),
শিমলা ট্রফি (ঘূর্ণায়মান),
এবং রাষ্ট্রপতি কাপ, যা প্রতিবছর নতুন করে নির্মিত হয় ও স্থায়ীভাবে বিজয়ী দলকে প্রদান করা হয়।
ছবি: ডুরান্ড কমিটির সৌজন্যে।
Jul 05 2025, 08:52